হবিগঞ্জ, ৪ আগস্ট : হাওর, প্রকৃতি ও সংস্কৃতির মিলনস্থল। বিস্তীর্ণ জলরাশি, পাখির কিচিরমিচির, মাছের বিচরণ আর নৌকায় গাঁথা মানুষের জীবনধারা এই হাওর অঞ্চলকে দিয়েছে অনন্য বৈশিষ্ট্য। কিন্তু সেই প্রাণবন্ত হাওর আজ নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। কারণ, অপরিকল্পিত উন্নয়নের নামে চলছে প্রকৃতির ওপর নির্মম ছুরি চালানো।
সম্প্রতি হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ ও বানিয়াচং উপজেলার বিস্তীর্ণ হাওর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও রাস্তা আছে কিন্তু ব্রিজ নেই; কোথাও ব্রিজ নির্মিত হলেও সংযোগ সড়ক অনুপস্থিত। জলাভূমির বুক চিরে যেন ছড়ানো হয়েছে পরিকল্পনাহীন কংক্রিট।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত সরকারের আমলে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জনপ্রতিনিধি হাওরবাসীর স্বার্থ না ভেবে নিজেদের সুবিধার জন্য প্রকল্প গ্রহণ করেন। এতে হাওরের স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ ও জীববৈচিত্র্যে নেমে আসে বিপর্যয়।
বানিয়াচং উপজেলার মন্দরী ইউনিয়নের আগুয়া গ্রামে দেখা যায়, বর্ষা মৌসুমে যেখানে একসময় নৌকাই ছিল যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম, সেখানে আজ কাদামাটির রাস্তা ও অর্ধসমাপ্ত ব্রিজের কারণে সেই পথ রুদ্ধ হয়ে পড়েছে। এতে স্থানীয়দের যাতায়াত যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর স্বাভাবিক বিচরণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে হাওরে মাছের উৎপাদনও কমে গেছে।
নৌকা মাঝি মোস্তাক আখঞ্জী বলেন, “আজ আপ্নেরা নৌকা ভ্রমণে এসেছেন, আগামীতে আর আসতে পারবেন না। বর্ষায় বিথাঙ্গল বড় আখড়া, দিল্লির আখড়া, মালিকের দরগা ঘুরতে যাওয়া যাবে না। আমরাও নৌকা চালিয়ে জীবন চালাতে পারব না।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, হাওরের মতো সংবেদনশীল এলাকায় যেকোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন না করলে তা পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
হাওরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা না গেলেও, তা অবশ্যই হওয়া উচিত পরিকল্পিত ও পরিবেশসম্মত উপায়ে। শুধু প্রকল্প বাস্তবায়নের তাগিদে হাওরের বুক ছেঁড়ে রাস্তা তৈরি করলে তা হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। এই ঐতিহ্য রক্ষা করতে হলে প্রয়োজন সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা, সঠিক তদারকি এবং প্রকৃত হাওরবান্ধব উন্নয়ন দৃষ্টিভঙ্গি। না হলে আগামী প্রজন্ম হয়তো শুধু বইয়ের পাতায় হাওরের কথা পড়বে—বাস্তবে আর দেখবে না।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan